মঙ্গল গ্রহে প্রাণের আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা!
মঙ্গল গ্রহে ব্যাকটেরিয়ার মতো এককোষী অণুজীব পাঠালে তা বৈরি পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে কিনা তা জানতে পৃথিবীতেই পরীক্ষা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এজন্যে তারা দক্ষিণ আমেরিকার আতাকামা মরুভূমিতে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেন।
মঙ্গল গ্রহের মতো না হলেও প্রাণহীন আতাকামা রুক্ষ মরুভূমিতে ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও ছিল একেবারেই কম। কিন্তু প্রায় এক দশক পর বিজ্ঞানীরা বিষ্ময়ের সঙ্গে সম্প্রতি দেখেছেন, বিরূপ প্রকৃতিতেও জেগে উঠেছে ঘুমন্ত ব্যাকটেরিয়াগুলো। নিজেদের বিস্তারে কাজও শুরু করে দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা দেখতে চেয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে রুক্ষ মরুভূমিতে প্রাণের বিকাশ সম্ভব কিনা! বাস্তবতা হচ্ছে, সম্ভব। আর তাই যদি হয়, তবে মঙ্গল পৃষ্ঠে প্রাণ সঞ্চারের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমনটাই বলছেন, মার্কিন বিজ্ঞানী দলটি।
এই বিষয়ে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক ড্রিক শ্যুলজে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিরর’কে জানিয়েছেন, মঙ্গলগ্রহের অবস্থা দেখে অনেকেই বলে থাকেন সেখানে প্রাণের সম্ভাবনা অসম্ভব কল্পনা! যেমনটা আতাকামা মরুভূমির বেলাতেও বলা হয়। কিন্তু এখানে যেহেতু সেই ধারণাটি মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, তখন মঙ্গল গ্রহের ব্যাপারেও আশাবাদী হওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাণহীন স্থানে জীবের বিকাশ পরীক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আতাকামা’র ৬টি ভিন্ন স্থানে এসব ঘুমন্ত ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেন। এই সময়টাতে প্রাণের সম্ভাবনা দেখা না গেলেও কিছুদিন আগে মরুভূমিতে হঠাৎ করেই সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। আর এতেই ঘুমন্ত ব্যাকটেরিয়াগুলোর ভেতরে পরিবর্তন দেখা দেয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গল গ্রহের বুকেও যদি এমন ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর ফলে লাল গ্রহটিতে সবুজের দেখা মিলতে পারে।
গবেষক ড্রিক জানান, ‘এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিরূপ পরিবেশে দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। মাটির বুকে এগুলো শত বছর এমনকি হাজার বছর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। আতাকামা মরুভূমি এতটাই রুক্ষ যে তা মঙ্গল পৃষ্ঠের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যদি এখানে পানির সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া জীবন ফিরে পায় তবে মঙ্গলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটালে সাফল্য আসবেই।’
অবশ্য একদল বিজ্ঞানী আগেই দাবি করেছেন, মঙ্গল গ্রহকে আজ যেমনটা দেখা যাচ্ছে অতীতে এমনটা ছিল না। শত শত কোটি বছর আগে সেখানেও বয়ে যেত নদী, উদ্ভিদও ছিল। ফলে সেই সময় মঙ্গল গ্রহে জ্বীবাণু কিংবা এককোষী জীব না থাকার কোনো কারণ নেই। সেক্ষেত্রে পানির সংস্পর্শ পেলে মঙ্গল পৃষ্ঠেই ঘুমিয়ে থাকা এমন অনুজীব জেগে উঠতে পারে।
বিষয়টি পরিষ্কার হতেই আগামী ২০২১ সাল নাগাদ ইউরোপ থেকে মঙ্গল গ্রহে বিশেষ রোবটযান পাঠানো হবে। বিশেষ ওই অভিযানে মঙ্গলের বুকে ২ মিটার খুঁড়ে মাটি সংগ্রহ করবে রোবটযান। এরপর তা পরীক্ষা করে দেখা হবে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আসলেই রয়েছে কিনা।
No comments