গরিবরা সহজে বেহেশতে যাবে


আল্লাহর দেওয়া দুনিয়ার ধন-সম্পত্তি ও অর্থ-সম্পদের হিসাব পরকালে সবাইকে দিতে হবে। কোন পথে আয় করা হয়েছে এবং কোন কাজে অর্থ-সম্পদ ব্যয় হয়েছে এর যথাযথ হিসাব দেওয়া ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করা যাবে না।

তাই ধনীদের তুলনায় গরিবদের সুবিধা পরকালে অনেক বেশি। হাদিসের কিতাবগুলোতে গরিব ও অসহায় মানুষের ফজিলত ও মর্যাদাসংক্রান্ত অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, এরূপ বহু লোক যাদের মাথার চুল উস্কখুস্ক, মানুষের দরজা থেকে বিতাড়িত- তারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহতায়ালা তা পূরণ করেন (মুসলিম শরিফ)।

অর্থাৎ তারা আল্লাহর কাছে এত দামি যে, তারা যা বলেন, মুখে যা উচ্চারণ করেন, আল্লাহতায়ালা তা কবুল করে নেন। অপর হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, অভাবগ্রস্ত লোকেরা ধনী লোকদের পাঁচশ বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে এবং তা হবে কেয়ামতের অর্ধ দিন (তিরমিজি)।

আমরা জানি, কেয়ামতের একদিন দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান। তাই কেয়ামতের অর্ধদিন হলো দুনিয়ার পাঁচশ বছর। আর্থিকভাবে যারা দুর্বল প্রিয়নবী (সা.) তাদের প্রশংসা করেছেন।

হজরত আবু দারদা (রা.) নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, তোমাদের দুর্বলদের মধ্যে আমাকে তালাশ করবে। কেননা দুর্বলদের দরুণই তোমাদের (সবলদের) জীবিকা দান করা হয়।

অথবা বলেছেন, সাহায্য দান করা হয় (আবু দাউদ)। গরিব ও অভাবী লোকেরা জান্নাতে বেশি যাবে। এ বিষয়ে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, আমি বেহেশতের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলাম যে, তার অধিবাসীদের অধিকাংশই গরিব মিসকিন।

আর দোজখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসী নারী। অন্য হাদিসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, গরিব মুহাজিররা কেয়ামত দিবসে ধনবানদের ৪০ বছর আগে বেহেশতে পৌঁছে যাবে (মুসলিম)। হজরত সহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে দিয়ে গমন করল।

তিনি তখন তার কাছে উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, যে লোকটি এই মাত্র চলে গেল তার সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? সে বলল যে, ইনি তো অন্যতম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি।

আল্লাহর কসম, ইনি এরূপ যোগ্য ব্যক্তি যে, যে কোনো পাত্রীর কাছে তার বিবাহের পয়গাম গেলে ওই পাত্রী তার সঙ্গে বিবাহে রাজি হবে।

তখন রসুলুল্লাহ (সা.) কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি ওই স্থান দিয়ে চলে গেল। রসুলুল্লাহ (সা.) তার সম্পর্কেও কাছে বসা লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন। বললেন, এ লোক সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? সে বলল, এ ব্যক্তি তো এক দরিদ্র মুসলমান।

সে তো এরূপ অযোগ্য যে, যে কোনো পাত্রীর প্রতি সে বিবাহের পয়গাম পাঠালে কেউই তা গ্রহণ করবে না। আর সে যদি কারও ব্যাপারে কোনো সুপারিশ করে তাও কবুল করা হবে না। কোনো কথা বললে সে কথাও শোনা হবে না।

তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি যার প্রশংসা করলে, সারা জগৎ তার মতো লোকে পরিপূর্ণ থাকলেও তাদের সবার তুলনায় ওই লোকটি উত্তম। যাকে তুমি অযোগ্য বলছ (বোখারি, মুসলিম)।

লেখক : খতিব, সমিতিবাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

Collected News : bd-pratidin.com

No comments

Powered by Blogger.