নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী, কিছুই করার নেই ইসির
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠ কার্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
ইসি সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং ভোটের সব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যাবে। এর আগে নির্বাচন কমিশন কোন দলের প্রচারণা ও নির্বাচনী আইনের বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ফলে তফসিলের আগে কোন দলের প্রচরণা বন্ধ করবে না ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, আমরা সকল দলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ নির্বাচন চাই । কিন্তু কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে তাদের নির্বাচনে আসতে বাধ্য করার মতো আইনে আমাদের দেয়া নেই। আইন অনুযায়ী সরকার যে কোন সময় নির্বাচন করতে বললে আমরা তা করতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, ইসির কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা। সেটি করতে যা করা দরকার কমিশন তা করবে। তবে তফসিলের পর আইন অনুযায়ী আমাদের হাতে ক্ষমতা আসে এর আগে সরকারে সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষে দেশে-বিদেশে ভোট চেয়ে একতরফা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বরাবর একটি চিঠি দিয়ে নালিশ জানিয়েছিল বিএনপি। চিঠিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দেশে যেসব জায়গায় জনসভা করেছেন এবং রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে গিয়ে প্রবাসীদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্যাদি উল্লেখ করে নালিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নালিশের বিষয়ে আইন অনুযায়ী কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি বলছে প্রচারণা বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বা নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে কিছু করার আছে। এখন উনাদেরও (বিএনপি) তো প্রচারণা চালাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না। তফসিল ঘোষণার পরই নির্বাচনী প্রচারণা বিষয়ে বা আচরণবিধি প্রতিপালন সংক্রান্ত বিধান কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে বলে মন্তব্য করেন ইসি সচিব।
তিনি বলেন, দলীয় প্রচারণা নিয়ে বা প্রতীকে নিয়ে কেউ ভোট চাইলে এখন নির্বাচন কমিশন আইনগতভাবে কিছু করতে পারে না। তফসিল ঘোষণার আগে কমিশনের করার কিছু নেই। তবে তফসিল ঘোষণা হলেই সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপর কমিশন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে। তাই ডিসেম্বরের শেষের দিকে অথবা ২০১৯ সালের প্রথম দিকে যে কোনো দিন একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জুলাইয়ে রোডম্যাপ ঘোষণাকালে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, আমরা তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এখন সরকারের কাছে কোনো অনুরোধ থাকবে না। তবে তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতির প্রয়োজন হলে অনুরোধ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট পর্যন্ত (৪০-৪৫ দিন) নির্বাচনী আইন-বিধি অনুযায়ী ইসি কাজ করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ভোটের বছরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা সিলেট সফর করেছেন। গত ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেটে গিয়ে মাজার জিয়ারত করে জনসভায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রাক-নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। বসে নেই নির্বাচন কমিশনও স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। সরকারের পক্ষ থেকে যে কোন সময় নির্বাচন পরিচালনা করার নির্দেশ অসতে পারে সে লক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।
সাম্প্রতি নির্বাচন মাঠ কর্মকর্তাদেও সঙ্গে বৈঠকে সিইসি কে এম নূরুল হুদা সকল কর্মকর্তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ ও গাইবান্ধা-১ আসনে উপনির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে পুলিশসহ সকল বাহিনীর সহযোগিতা চান সিইসি।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া একার পক্ষে ইসির সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এ বছর ভোটার বছর, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বৈঠকে পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনকালীন ভোটের বিষয়ে সব ধরনের নির্দেশনা দেবে কমিশন। পুলিশ জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে আইনের মধ্য থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বছরের শেষভাগে ভোটের সূচি থাকায় মাস গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা রয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ভোট থেকে বিরত রাখতে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম তদারকির পরামর্শ দিয়েছেন পয়বেক্ষকরা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরুর এখনও আট মাস বাকি। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনে রদবদলও শুরু হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োজিত থাকেন জেলা প্রশাসকরাই। সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা থাকেন সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে। ভোটের বছরে জেলা প্রশাসকদের যেভাবে রদবদল শুরু হয়েছে। এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের রুটিন ওয়ার্ক বললেও নির্বাচনে এসব কর্মকর্তারাই ভোটের অন্যতম দায়িত্বে থাকবেন।
উপ-সচিবদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দিতে কর্মকর্তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে মন্ত্রণালয়। ওই ফিট লিস্ট ধরে কয়েকধাপে এদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ডিসি হিসেবে নিয়োগের জন্য কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
চূড়ান্ত তালিকাভুক্তদের মধ্য থেকেই জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পর সাধারণত কয়েক বছর জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকেন এসব কর্মকর্তারা।
সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহসহ ২২ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) পরিবর্তন হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত রোববার এক আদেশে ১৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ এবং তিন ডিসিকে অন্য জেলায় বদলি করে আদেশ জারি করে।
ছয় বিভাগীয় শহরে বাইরে যশোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, বান্দরবান, নেত্রকোণা, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাঙামাটি, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, ভোলা, কুড়িগ্রাম, নরসিংদী ও হবিগঞ্জ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ২ মে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ ২৪ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভাগীয় কমিশনার (সিটি করপোরেশন এলাকায়) ও জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে কয়েকটি এলাকায় সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারকেও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়ার নজির রয়েছে।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর ১৫ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ কিছু কর্মকর্তাকে ইসির সঙ্গে পরামর্শ না করে বদলি করা যাবে না। এ করণে সরকার নির্বানের আগে চূড়ান্তভাবে রদবদল করছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন পযবেক্ষকরা।
Collected News : bd24live.com
No comments