যে দিন ক্ষমতা দখল সে দিনেই গণতন্ত্রের স্লোগান
সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবার তাঁর দল জাতীয় পার্টির সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছেন।
এর অংশ হিসেবে দলটি আজ (২৪ মার্চ) রাজধানীতে মহাসমাবেশ করেছে। তবে ৩৬ বছর আগে আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন।
তাঁর ক্ষমতা দখলের সেই দিনেই ঢাকায় মহাসমাবেশ করে জেনারেল এরশাদ গণতন্ত্রের কথা বললেন।
তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয়ী হয়ে 'ইতিহাস সৃষ্টি করবে।'
গণঅভ্যুত্থানে পতনের পরও জেনারেল এরশাদ রাজনীতিতে টিকে গেছেন। এখন তিনি বলে থাকেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রধান দুই দলের ভোটের রাজনীতির কারণে তাঁর পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে।
তবে জেনারেল এরশাদ এবার এককভাবে নির্বাচন করার কথা বলেছেন। একই সাথে তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে হিসাব-নিকাশ অন্য রকম হতে পারে। ফলে তাঁর অবস্থান নিয়ে রহস্য থাকছেই।
দু'হাজার চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে জেনারেল এরশাদের নানান ধরণের বক্তব্য সে সময়ও রহস্য সৃষ্টি করেছিল।
শেষপর্যন্ত জাতীয় পার্টি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনের পরে জাতীয় পার্টির তিনজন নেতা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন।
জেনারেল এরশাদ নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে রয়েছেন। একইসাথে তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ হয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। দলের এমন দ্বৈত অবস্থানের কারণে তিনি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এসব পুরনো প্রশ্ন মানুষ মনে রাখে না। সরকারে আছি নাকি নেই, এটা বড় কথা নয়। কথা হলো, মানুষ সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের জন্য আর কোন দল নেই। এখন একমাত্র জাতীয় পার্টিই রয়েছে।
পুরনো হলেও প্রশ্নটা যে রয়েছে, সে ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, তিনি সেটা জানেন। এখন আগামী দু'এক মাসের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। তাঁর দলের তিনজন সদস্যও মন্ত্রীসভা থেকে বেরিয়ে এসে তাঁরা পুরোপুরি বিরোধীদল হবেন বলে জেনারেল এরশাদ উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সরকার থেকে তাদের সরে আসার পর সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে প্রতিনিধি নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করা হবে। সেই সরকার নির্বাচন করবে। সেটাই তাদের প্রত্যাশা। তবে রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সময়ের অবস্থান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
এমনকি দলটি নিয়ে মানুষের মাঝে আস্থার অভাব আছে। জাতীয় পার্টির অবস্থান বা জেনারেল এরশাদের বক্তব্য মানুষ বিশ্বাস করে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন যে, মানুষ কাকে বিশ্বাস করে?
একইসাথে তিনি বলেন, আমাদের মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে এসেছি। আমরা ২৭ বছর ক্ষমতার বাইরে। আমি ছয় বছর জেলে ছিলাম। আমাদের কর্মীরা জেলে ছিল। আমাদের আগে কোন সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। তা স্বত্বেও জাতীয় পার্টি বেঁচে আছে। আমরা ক্ষমতায় যাওয়া স্বপ্ন দেখছি। এটা কী মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করছে না?
রাজনীতিতে মেরুকরণের দুই প্রধান অনুঘটক হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। দেশেরও রাজনীতিও প্রধানত এই দুই ভাগে বিভক্ত। সেখানে জাতীয় পার্টি কোন দলের বিকল্প হতে চাইছে, এই প্রশ্নের জবাবে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, এটাতো আপনাদের কথা। কিন্তু জনগণের মনের কথা কী? বিএনপি দেশের জন্য কি করেছে? তারা কখনও দেশের উন্নতির জন্য কাজ করেনি। আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি। আর আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করেছে।
জেনারেল এরশাদ আরও বলেন, এখন মানুষ চেয়ে আছে জাতীয় পার্টির দিকে।
এবারই প্রথম তিনি মুক্ত মানুষ হিসেবে এবং তাঁর দল মুক্ত দল হিসেবে নির্বাচন করতে পারবে। ফলে তাঁর দলের এককভাবে অবস্থান তৈরির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বিবিসি
No comments