আবহাওয়া আর অনাহারের দুর্ভোগে পালংখালির রোহিঙ্গারা


মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে আটকে আছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। কক্সবাজার সীমান্তে নতুন করে আসা এসব রোহিঙ্গা আবহাওয়া ও অনাহারের দুর্ভোগে পড়েছেন।

বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে নতুন করে আসা হাজারো রোহিঙ্গা দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মাথার উপর ছাউনি নেই। অনেকেই অনাহারে নির্জিব হয়ে পড়েছেন। গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা সবচাইতে সঙ্গীন। 

বাংলাদেশে প্রবেশের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ধীর হওয়ার কারণে সীমান্তে আটকে পড়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশি অসুস্থ মানুষগুলোকে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে চিকিৎসা দেওয়ার পরে সীমান্তের শুন্যরেখার কাছে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সেখানে জাতিসংঘ এখানে কিছু খাবার পানি ও বিস্কুট সরবরাহ করেছে। 

আর বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে কলেরার টিকা খাওয়ানো হয়েছে। নতুন আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সীমান্তে মানবেতর অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে ইউএনএইচসিআর এর মুখপাত্র জানিয়েছেন। আর এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার আহবান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

এদিকে সোমবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ড্রোন ভিডিওতে উঠে এসেছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ফের রোহিঙ্গা ঢলের চিত্র। রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু পর রাখাইনে ২৮৮টি রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, অক্টোবরের ১৫ তারিখ থেকে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান রোহিঙ্গা ঢল অব্যাহত থাকলে শরণার্থীর এ সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে বলেও সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)।

স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম। সংস্থাটি আরও জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।

No comments

Powered by Blogger.