জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরে অনড় কেন ট্রাম্প?
গত বছরের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন। সেইসঙ্গে তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরানোর ঘোষণা দেন।
আর বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী মে (সম্ভবত ৮ মে) মাসে তারা মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবে। ঘোষণা অনুযায়ী এমন সময় মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে যখন ইসরাইল তাদের স্বাধীনতা ঘোষণার ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে।
ট্রাম্প যখন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন তখন তার এই সিদ্ধান্তকে সাদরে গ্রহণ করেন ইসরাইলপন্থীরা। আর ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয় ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা।
কিন্তু নানা সমালোচনা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও ট্রাম্প কেন তার সিদ্ধান্তে অনড়? তাছাড়া কেনই বা এর আগে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি ২০১৭ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রও এ স্বীকৃতি দেয়নি। বরং অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রও তাদের দূতাবাস তেলআবিবে রেখেছে। কারণ ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয়ই জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী দাবি করে আসছে।
ইসরাইলপন্থী বাম ধারার অ্যাডভোকেসি সংগঠন জে স্ট্রিটের সরকার বিষয়ক ভাইস-প্রেসিডেন্ট দিলান উইলিয়ামস বলছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র যে মধ্যস্থতা করছে, দূতাবাস সরানোর সিদ্ধান্তের কারণে ওয়াশিংটন সে আস্থা হারাবে। উইলিয়ামস বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, ফিলিস্তিন ও আরব দেশগুলো সে আস্থা রাখতে পারবে না।
জে স্ট্রিটের এ প্রধান লবিস্ট ফক্স নিউজকে বলেন, বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছার আগে এ ধরনের উদ্যোগ (দূতাবাস স্থানান্তর) নেওয়া উচিত হবে না। এ ধরনের উদ্যোগের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
উইলিয়ামস বলছেন, ‘জেরুজালেমের মর্যাদার ক্ষেত্রে সামান্যতম পরিবর্তন, হোক সেটা বাস্তবে কিংবা আইনে, সহিংসতার জন্ম দিতে পারে, যেটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।’
এদিকে, প্রসিদ্ধ যাজক জন হাগী মার্কিন প্রশাসনের ওই ঘোষণার অল্প সময় আগে ফক্স নিউজকে বলেন, কয়েক লাখ যীশু খ্রিস্টের ধর্মের প্রচারক (যারা ইসরাইলপন্থী) ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে আছেন যে, ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দূতাবাস স্থানান্তর করেন কি না।
হাগী বলছেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ৬ কোটি খ্রীস্ট ধর্ম প্রচারক ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ট্রাম্প যদি জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করেন তাহলে তিনি ঐতিহাসিকভাবে অমরত্ব লাভ করবেন।’
‘আর ট্রাম্প যদি তা না করতে পারেন তাহলে তার আর বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্টদের, যারা এ রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না, বিশেষ করে যখন ওইসব ধর্মপ্রচারক হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন,’ বলেন হাগী।
প্রসঙ্গত, টেক্সাসের স্যান অ্যান্টোনিওর কর্নাস্টোন চার্চের প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র যাজক এই হাগী। এ ছাড়া ২০০৬ সালে ইসরাইলের পক্ষে অলাভজনক খ্রিস্টান ইউনাইটেড প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
২০১৬ সালে মার্চ মাসে গ্যালপ পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়, মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে সরানো উচিত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মতামত দেনটি অধিকাংশ আমেরিকান। তবে যারা মতামত দিয়েছেন তাদের মধ্যে ২৪ শতাংশ পক্ষে এবং ২০ শতাংশ বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন।
শুধু ট্রাম্পই যে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা নয়, বরং সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং জর্জ ডব্লিউ বুশও এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন।
মার্কিন কংগ্রেস ১৯৯৯ সালের মধ্যে দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরে ১৯৯৫ সালে অর্থায়নের অনুমোদন দেয়। কিন্তু আইনে একটি দুর্বলতা থাকায় সেটির সুযোগ নিয়েছেন আগের প্রেসিডেন্টরা।
Collected News : poriborton.com
No comments