অন্তঃকোন্দলে ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা


স্থানীয় সরকার ও সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে হারের পেছনে দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণ স্পষ্ট হয়েছে। বিষয়টি এতদিন ভেতরে ভেতরে থাকলেও এই দুটি নির্বাচন ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে।এরপরই টনক নড়েছে হাইকমান্ডের। খোদ দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তঃকোন্দল নিয়ে অস্বস্তির সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কোন্দলে জড়িতদের মনোনয়ন না দেয়া, দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের মত কঠোর বার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন, ছাত্রলীগের সম্মেলনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-১ আসনের উপ-নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভাসহ স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ বিষেয়ে একটি তালিকা করে রিপোর্ট জমা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

দলের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের মনোনয়ন দেয়া হবে না, এমনকি দলীয় পদধারীদের বহিষ্কারেরও কথা বলেছেন দলীয় প্রধান।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়। বাকি চার সদস্য হলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আবদুর রহমান। এ কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

পরাজয়ের জন্য দলীয় সভাপতির কাছে অভিযোগ করে তারা বলেন, ‘দলীয় নেতাদের মধ্যে অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু, মনোনয়ন না পেয়ে তারা বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় আইনজীবী নেতাদের মধ্যে একটা অন্তঃকোন্দল ছিল, সেটারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই নির্বাচনে। ফলে নির্বাচনের জয় নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও আমরা জিততে পারিনি।’

বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনে দলীয় সভাপতিকে প্রস্তাব করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তঃকোন্দলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার তাগিদ দিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন।

কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তাব করেন হাছান মাহমুদ। এরপর বিষয়টি একাধিক নেতা আলোচনায় নিলে কোনো সুবিধাজনক সময়ে (ঈদের পর) এটি আয়োজন করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে রড, সিমেন্ট, ইটসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বাড়ার বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়। জন্ম নিবন্ধনের বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করেন হাছান মাহমুদ।

এ সময় তিনি বলেন, ২ বছরের মধ্যে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন না করলে রেজিস্ট্রার্ড জেনারেল ঢাকায় এসে করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। এজন্য উপজেলায় এই সুবিধা রাখার প্রস্তাব করেন হাছান মাহমুদ।

এছাড়া এখন থেকে ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, ১ মেসহ অন্যান্য দিবসগুলো যথাযথভাবে পালনের কথা বলা হয় বৈঠকে।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন রোজার আগেই করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান। সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ মে।

দলটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে গুরুত্বারোপ করে আলোচনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী রোজার আগেই ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। পরে অন্যান্য কর্মসূচির সঙ্গে সময় মিলিয়ে আগামী ১১ মে সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেন শীর্ষ নেতারা।

২০১৫ সালের ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসাইন।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটির দুই বছর মেয়াদ গত বছরের ২৬ জুলাই শেষ হলেও সম্মেলন কিংবা কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়নি এতদিন।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্মেলনের বিষয়ে বলেছিলেন, নেত্রীর ইচ্ছা স্বাধীনতার মাসে ছাত্রলীগ সম্মেলনের আয়োজন করুক।

এরপর ১২ জানুয়ারি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ মার্চ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন ও ১ এপ্রিল দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু, অদৃশ্য কারণে সে তারিখ ছাত্রলীগের সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি সংশ্লিষ্টদের।

Collected News : poriborton.com

No comments

Powered by Blogger.